রক্ত পরীক্ষা ছাড়াই ডায়াবেটিস হলে বুঝবেন যে লক্ষণে
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন ডায়াবেটিসের ব্যাপকতা অনেক বেশি। নগরায়ণের কারণে জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবে ডায়াবেটিসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছেই। ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। কিন্তু একে সুনিয়ন্ত্রিত রাখতে পারলে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। যাদের দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিস আছে, তাদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মধ্যেই থাকতে হয়। কিন্তু পারিবারিক ইতিহাস থাকলেও ডায়াবেটিস হয়নি ভেবে যারা নিশ্চিন্তে রয়েছেন, চুপিসারে কখন যে ডায়াবিটিস শরীরে থাবা বসাবে তাদের শরীরে, তা ধরতে পারবেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবিটিস ধরা না পড়লে বা সঠিক চিকিৎসা না হলে কিডনি, লিভার, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে চুলও ঝরে পড়তে পারে। এ ছাড়াও শরীরে আরও বেশ কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলো দেখলে বোঝা যায়, কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না।
রক্ত পরীক্ষা করার আগেই শরীরে যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন—
ত্বকের দাগছোপ: ঘাড়, গলা, দুই বাহুমূলে কালো ছোপ পড়েছে? নিয়মিত ঘরোয়া টোটকায় ত্বকচর্চা করেও ফল মিলছে না। তবে চোখে দেখে বুঝতে পারছেন এটি ঠিক রোদে পোড়া দাগ নয়। দীর্ঘ দিন ধরে রক্তে শর্করা বেশি থাকলে, শরীরের এই বিশেষ বিশেষ জায়গায় কিন্তু কালচে ছোপ পড়ে।
কেটে গেলে সারতে চায় না: সপ্তাহ খানেক আগে সব্জি কাটতে গিয়ে একটু আঙুল কেটে গিয়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই তা শুকিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ৭ দিন হয়ে গেল কিছুতেই তা সারতে চাইছে না। এই লক্ষণ কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে হতে পারে।
বার বার প্রস্রাবের বেগ: এমনিতেই শীতকালে ঘাম হয় না বলে ঘন ঘন বাথরুমে ছুটতে হয়। ইদানীং আবার প্রস্রাবের বেগের চোটে মাঝ রাতে দুতিন বার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। পানি বেশি না খাওয়ার পরও যদি এই সমস্যা হয়, বুঝতে হবে ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে।
পিপাসা মিটতে চায় না: শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সাধারণত খুব বেশি পানি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু পরিশ্রম না করেও যদি এই সময়ে পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, তা রক্তে শর্করার ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার একটি ইঙ্গিত হতে পারে।
ক্লান্ত লাগা: বার বার প্রস্রাবের ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে শর্করা এবং বিভিন্ন খনিজ বেরিয়ে গেলে ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে প্রস্রাবের পরিমাণও বেড়ে যায়।
যৌনাঙ্গে সংক্রমণ: রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে ঘন ঘন প্রস্রাব পায়। সেখান থেকে মূত্রাশয়, যৌনাঙ্গে সংক্রমণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
বেশি বেশি খিদে পাওয়া: দুপুরে পরিমাণ মতো সব কিছু খাওয়ার পরেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই খিদে পেয়ে যাচ্ছে? রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে কিন্তু সারা ক্ষণ খিদে পায়।
কাদের ঝুঁকি বেশি:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। এছাড়া যারা নিয়মিত হাঁটাচলা বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না, অলস বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
এছাড়া নারীদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে। যাদের হৃদরোগ রয়েছে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যেসব শিশুর ওজন বেশি, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস রয়েছে, যাদের মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল, সেই সব শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আরটিভি/এফআই
১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২০